দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রধান উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান। তার মতে, দেশে আগে ‘নিয়ন্ত্রিত স্বৈরাচার’ ছিল, আর এখন চলছে ‘অনিয়ন্ত্রিত স্বৈরাচার’।
তিনি বলেন, “দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম জনগণকে হতাশ করছে।"
শনিবার বিকেল ৪টায় সিলেট নগরের দরগাগেট এলাকার মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে আয়োজিত এক কর্মিসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাসদ সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজও বক্তব্য দেন।
কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, "গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে সরকারের ভূমিকা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।"
তিনি আরও বলেন, "দেশের অর্থনীতি সংকটে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকার কাঠামোগত পরিবর্তনের বদলে ক্ষমতা সংহত করতে ব্যস্ত।"
কর্মিসভায় সভাপতিত্ব করেন বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক আবু জাফর। এ সময় আরও বক্তব্য দেন;বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম,বাসদের সাবেক আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়,মৌলভীবাজার জেলা বাসদের আহ্বায়ক মইনুর রহমান,চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেটের আহ্বায়ক নাজিকুল ইসলাম,শ্রমিকনেতা মুখলেছুর রহমান,সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের আহ্বায়ক মাসুমা খানম,বাংলাদেশ চা-শ্রমিক নেতা বীরেণ সিং,সমাজতান্ত্রিক নির্মাণশ্রমিক ফ্রন্টের নেতা জিতু সেন,ব্যাটারিচালিত যানবাহন সংগ্রাম পরিষদের সহসভাপতি মনজুর আহমদ,সভার সঞ্চালনায় ছিলেন বাসদ সিলেটের সদস্যসচিব প্রণব জ্যোতি পাল।
কর্মিসভা শেষে আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, ব্যাটারিচালিত যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান, চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ, এবং ‘মব কালচার’ বন্ধ করার দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।মিছিলটি নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “দেশে এখন জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। দ্রুত একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।”বিশ্লেষকদের মতে, বাসদের বক্তব্য সরকারবিরোধী আন্দোলনের চাপ বাড়াবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই ধরনের বক্তব্য মাঠপর্যায়ে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলোর দাবি, দেশে এখন রাজনৈতিক দমননীতি চরম আকার ধারণ করেছে। বাসদের মতো বামপন্থি দলগুলোও এখন প্রকাশ্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে, যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্পষ্ট প্রতিফলন।
বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রশ্নে নানা বিতর্ক চলছে। কমরেড খালেকুজ্জামানের বক্তব্য সেই বিতর্ককে আরও গভীর করেছে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—বাসদের মতো দলগুলোর এই কঠোর অবস্থান কি ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে? নাকি এটি সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ?